ধ্বনি কাকে বলে? ধ্বনি কত প্রকার? ধ্বনির প্রকারভেদ কি?
স্বরধ্বনি ও ব্যাঞ্জনধ্বনি প্রকারভেদ কি কি?
ধ্বনি কি? ধ্বনি কাকে বলে?
আমরা কি জানি যে, ধ্বনি কাকে বলে? হ্যা, ভাষার ক্ষুদ্রতম একককেই ধ্বনি বলা হয়।
ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতে, ” একটি ভাষার উচ্চারিত শব্দ গুলোকে বিশ্লেষণ করলে কতগুলো ধ্বনি পাই, মূলত এটিই হল ধ্বনি। “
ধ্বনি বাংলা ব্যকরনের অন্যতম একটি পাঠ। আজকে আমরা শিখব ধ্বনি কি? ধ্বনি কাকে বলে? ধ্বনি কত প্রকার? স্বরধ্বনি ও ব্যাঞ্জনধ্বনি কাকে বলে এবং এসব বিষয়ে খুবই তথ্যবহুল গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা।
বাংলা ভাষায় ৩৭টি মৌলিক ধ্বনি রয়েছে। এই ধ্বনিগুলোকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়।
১। স্বরধ্বনি
২। ব্যঞ্জনধ্বনি।
মৌলিক স্বরধ্বনি কয়টি?
মৌলিক স্বরধ্বনি ৭টি।
[অ্যা], [আ], [ই], [এ], [অ], [ও], [উ];
মৌলিক ব্যঞ্জনধ্বনি কয়টি?
মৌলিক ব্যঞ্জনধ্বনি ৩০টি:
[প], [ফ], [ব], [ভ], [ত], [থ], [দ], [ধ], [ট], [ঠ], [ড], [ঢ], [চ], [ছ], [জ], [ঝ], [ক], [খ], [গ], [ঘ], [ম], [ন], [ঙ], [স], [হ], [ল], [র], [ড়], [ঢ়]। এখানে তৃতীয় বন্ধনী দিয়ে ধ্বনি বা উচ্চারণ নির্দেশ করা হয়েছে।
স্বরধ্বনি কাকে বলে?
যেসকল ধ্বনি উচ্চারণের সময়ে মুখগহ্বরের কোথাও বায়ু বাধা প্রাপ্ত হয় না, সেগুলোকে স্বরধ্বনি বলে। উচ্চারণের সময়ে জিভের উচ্চতা অনুযায়ী, জিভের সম্মুখ-পশ্চাৎ অবস্থান অনুযায়ী এবং ঠোটের উন্মক্তি অনুযায়ী স্বরধ্বনিকে ভাগ করা হয়।
নিচের ছক থেকে স্বরধ্বনির এই উচ্চারণ-বিভাজন সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে।
স্বরধ্বনি কে কত ভাগে ভাগ করা যায়?
উচ্চারণের সময়ে জিভ কতটা উপরে ওঠে বা কতটা নিচে নামে সেই অনুযায়ী স্বরধ্বনি চার ভাগে বিভক্ত:
- ১। উচ্চ স্বরধ্বনি [ই] [উ]
- ২। উচ্চ-মধ্য স্বরধ্বনি [এ], [ও];
- ৩। নিম্ন-মধ্য স্বরধ্বনি [অ্যা)
- ৪। নিম্ন স্বরধ্বনি [আ]।
উচ্চ স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময়ে জিভ উপরে ওঠে নিন স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময়ে জিভ নিচে নামে।
জিভের সম্মুখ-পশ্চাৎ অবস্থান অনুযায়ী স্বরধ্বনি তিন ভাগে বিভক্ত:
- ১। সম্মুখ স্বরধ্বনি [ই], [এ [আ্যা]
- ২। মধ্য স্বরধ্বনি [আ]
- ৩। পশ্চাৎ স্বরধবনি [আ., [ও], [উ]
সম্মুখ স্বরধ্বনির বেলায় জিভ সামনের দিকে উচু বা নিচু হয়, পশ্চাৎস্বরধ্বনির বেলায় জিভ পিছনের দিকে উঁচু বা নিচু হয়।
স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময়ে ঠোট কতটুকু খোলা বা বন্ধ থাকে অর্থাৎ কী পরিমাণ উন্মুক্ত হয়, তার ভিত্তিতে স্বরধ্বনি চার ভাগে বিভক্ত:
- ১। সংবৃত [হী, [উ]
- ২। অর্ধ-সংবৃত [এ), [ও]
- ৩। অর্ধ-বিবৃত: [আ্যা] [আ)
- ৪। বিবৃত: [আ]।
সংবৃত স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময়ে ঠোট কম খোলে; বিবৃত স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময়ে ঠোট বেশি খোলে।
অনুনাসিক স্বরধ্বনি কি?
মৌলিক স্বরধ্বনিগুলো উচ্চারণের সময়ে বায়ু শুধু মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসে । এ সময়ে কোমল তালু স্বাভাবিক অবস্থায় থাকে। কিন্তু ধ্বনিগুলো উচ্চারণের সময়ে কোমল তালু খানিকটা নিচে নেমে গেলে কিছুটা বায়ু নাক দিয়েও বের হয়। এর ফলে ধ্বনিগুলো অনুনাসিক হয়ে যায়। স্বরধ্বনির এই অনুনাসিকতা বোঝাতে বাংলা স্বরবর্ণের উপরে চন্দ্রবিন্দু (‘) ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
মৌলিক স্বরধ্বনি: ই, [], [অ্যা], [আ], [অ], [ও], ডি]
অনুনাসিক স্বরধ্বনি: [ই], [এ], [আঁ], আঁ], [আঁ], [উ]
অর্ধস্বরধ্বনি কি এবং কাকে বলে?
যেসব স্বরধ্বনি পুরোপুরি উচ্চারিত হয় না সেগুলোকে অর্ধস্বরধ্বনি বলে।
বাংলা ভাষায় অর্ধস্বরধ্বনি রয়েছে চারটি: [ই], [উ], [এ] এবং [ও]। স্বরধ্বনি উচ্চারণ করার সময়ে টেনে দীর্ঘ করা যায়, কিন্তু অর্ধস্বরধ্বনিকে কোনভাবেই দীর্ঘ করা যায় না।
যেমন – ‘চাই’ শব্দে দুটি স্বরধ্বনি আছে: [আ] এবং [ই]। এখানে [আ] হলো পূর্ণ স্বরধ্বনি, [ই] হলো অর্ধস্বরধ্বনি। একইভাবে লাউ শব্দে দুটি স্বরধ্বনি আছে: [আ] এবং [উ]। এখানে [আ] হলো পূর্ণ স্বরধ্বনি, [উ] হলো অর্ধস্বরধ্বনি।
দ্বিস্বরধ্বনির সংজ্ঞা বা দ্বিস্বরধ্বনির প্রকারভেদ
পূর্ণ স্বরধ্বনি ও অর্ধস্বরধ্বনি একত্রে উচ্চারিত হলে দ্বিস্বরধ্বনি হয়। যেমন – লাউ’ শব্দের [আ] পূর্ণ স্বরধ্বনি এবং [উ] অর্ধস্বরধ্বনি মিলে দ্বিস্বরধ্বনি [আউ] তৈরি হয়েছে।
দ্বিস্বরধ্বনির কিছু উদাহরণ:
বাংলা বর্ণমালায় দুটি দ্বিস্বধ্বনির জন্য আলাদা বর্ণ নির্ধারিত আছে, যথাঃ ঐ এবং ঔ। ঐ- এর মধ্যে দুটি ধ্বনি আছে, একটি পূর্ণ স্বরধ্বনি [ও] এবং একটি অর্ধস্বরধ্বনি [ই]। একইভাবে ঔ- এর মধ্যে রয়েছে একটি পূর্ণ স্বরধ্বনি [ও] এবং ওকটি অর্ধস্বরধ্বনি [উ]।
ব্যঞ্জন ধ্বনি কাকে বলে?
যেসব ধ্বনি উচ্চারণের সময়ে বায়ু মুখের বাইরে বের হওয়ার আগে বাম্প্রত্যঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় বাধা পায়, সেগুলোকে ব্যঞ্জনধ্বনি বলে।
ব্যাঞ্জনধ্বনি কত প্রকার?
ধ্বনির উচ্চারণের স্থান, প্রকৃতি এবং ধ্বনির কম্পন ও বায়ুপ্রবাহর বিবেচনায় ব্যঞ্জনধ্বনিকে আরো অন্তত চার ভাগ করা যায়:
- ১. উচ্চারণস্থান অনুযায়ী বিভাজন,
- ২. উচ্চারণের প্রকৃতি অনুযায়ী বিভাজন,
- ৩. ধ্বনির কম্পমাত্রা অনুযায়ী বিভাজন এবং
- ৪. ব্যাঞ্জনধ্বনি সৃষ্টিতে বায়ুর প্রবাহের মাত্রা অনুযায়ী বিভাজন।
১. উচ্চারণস্থান অনুযায়ী ব্যঞ্জধ্বনির বিভাজন
বাকপ্রত্যঙ্গের ঠিক যে জায়গায় বায়ু বাধা পেয়ে ব্যঞ্জনধ্বনি সৃষ্টি করে সেই জায়গাটি হলো ঐ ব্যঞ্জনের উচ্চারণস্থান। উচ্চারণস্থান অনুযায়ী ব্যঞ্জনধ্বনিকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়:
- ১. ওষ্ঠ্য ব্যঞ্জন,
- ২. দন্ত্য ব্যঞ্জন,
- ৩, দন্তমূলীয় ব্যঞ্জন,
- ৪. মূর্ধন্য ব্যঞ্জন,
- ৫. তালব্য ব্যঞ্জন,
- ৬. কণ্ঠ্য ব্যঞ্জন,
- ৭. কণ্ঠনালীয় ব্যঞ্জন।
আরো পড়তে পারেন- বাক্য কাকে বলে? একটি সার্থক বাক্যের কী কী গুণ থাকা আবশ্যক?
আরো পড়তে পারেন- শব্দ গঠন বলতে কি বোঝ? নতুন শব্দ গঠনের উপায় কি কি?
ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারণের সময়ে কোন বাকপ্রত্যঙ্গের অংশগ্রহণ মুখ্য এবং কোন বাকপ্রত্যঙ্গের অংশগ্রহণ গৌণ, নিচের সারণিতে তা দেখানো হলো:
ওষ্ঠ্য ব্যঞ্জন কাকে বলে?
যেসব ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারণের সময়ে ঠোট দুটি কাছাকাছি এসে বায়ুপথে বাধা সৃষ্টি করে, সেগুলোকে ওষ্ঠ্য ব্যঞ্জন বলে। এগুলো দ্বি-ওষ্ঠ্য ধ্বনি নামেও পরিচিত। পাকা, ফল, বাবা, ভাই, মা প্রভৃতি শব্দের প, ফ, ব, ভ, ম ওষ্ঠ্য ব্যঞ্জনধ্বনির উদাহরণ।
দন্ত ব্যঞ্জন ধ্বনি কি?
যেসব ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারণের সময়ে জিভের ডগা উপরের পাটির দাঁতে লেগে বায়ুপথে বাধা সৃষ্টি করে, সেগুলোকে দন্ত্য ব্যঞ্জন বলে। তাল, থালা, দাদা, ধান প্রভৃতি শব্দের ত, থ, দ, ধ দন্ত্য ব্যঞ্জনধ্বনির উদাহরণ।
দন্তমূলীয় ব্যঞ্জন কাকে বলে?
যেসব ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারণের সময়ে জিভের ডগা উপরের পাটির দাঁতের গোড়ার সঙ্গে লেগে বায়ুপথে বাধা সৃষ্টি করে, সেগুলোকে দন্তমূলীয় ব্যঞ্জন বলে। নানা, রাত, লাল, সালাম প্রভৃতি শব্দের ন, র, ল, স দন্ত্যমূলীয় ব্যঞ্জনধ্বনির উদাহরণ।
মূর্ধন্য ব্যঞ্জন কাকে বলে?
দন্তমূল এবং তালুর মাঝখানে যে উঁচু অংশ থাকে তার নাম মূর্ধা। যেসব ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারণের সময়ে জিভের ডগা মূর্ধার সঙ্গে লেগে বায়ুপথে বাধা সৃষ্টি করে, সেগুলোকে মূর্ধন্য ব্যঞ্জন বলে। টাকা, ঠেলাগাড়ি, ডাকাত, ঢোল, গাড়ি, মূঢ় প্রভৃতি শব্দের ট, ঠ, ড, ঢ, ড়, ঢ় মূর্ধন্য ব্যঞ্জনধ্বনির উদাহরণ।
তালব্য ব্যঞ্জন কি?
যেসব ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারণের সময়ে জিভের ডগা খানিকটা প্রসারিত হয়ে শক্ত তালুর কাছে বায়ুপথে বাধা সৃষ্টি করে, সেগুলোকে তালব্য ব্যঞ্জন বলে।
ছাগল, জাল, চাচা, শসা ঝড়, প্রভৃতি শব্দের [চ, ছ, জ, ঝ, শ] তালব্য ব্যঞ্জনধ্বনির উদাহরণ।
কণ্ঠ্য ব্যঞ্জন এর সংজ্ঞা
যেসব ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারণের সময়ে জিভের পিছনের অংশ উঁচু হয়ে আলজিভের কাছাকাছি নরম তালুর কাছে বায়ুপথে বাধা সৃষ্টি করে, সেগুলােকে কণ্ঠ্য ব্যঞ্জন বলে।
কাকা, খালু, গাধা, ঘাস, কাঙাল প্রভৃতি শব্দের ক, খ, গ, ঘ, ঙ কষ্ঠ্য ব্যঞ্জনধ্বনির উদাহরণ।
কণ্ঠনালীয় ব্যঞ্জন কি?
কণ্ঠনালীয় ব্যঞ্জন উচ্চারণের সময়ে ধ্বনিদ্বার থেকে বায়ু কণ্ঠনালি হয়ে সরাসরি বের হয়ে আসে। হাতি শব্দের হ কণ্ঠনালীয় ব্যঞ্জনধ্বনির উদাহরণ।
২. উচ্চারণের প্রকৃতি অনুযায়ী ব্যঞ্জন ধ্বনির বিভাজন
ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারণের সময়ে ঠোট, জিভ, জিভমূল ইত্যাদি বাকপ্রত্যঙ্গের আকৃতিগত পরিবর্তন হয়। এতে বায়ুপথে সৃষ্ট বাধার ধরন আলাদা হয়ে উচ্চারণের প্রকৃতি বদলে যায়। উচ্চারণের এই প্রকৃতি অনুযায়ী ব্যঞ্জনধ্বনিকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা:
- পৃষ্ট ব্যঞ্জন,
- নাসিক্য ব্যঞ্জন,
- উষ্ম ব্যঞ্জন,
- পার্শ্বিক ব্যঞ্জন,
- কম্পিত ব্যঞ্জন,
- তাড়িত ব্যঞ্জন ইত্যাদি।
স্পৃষ্ট ব্যঞ্জন কাকে বলে?
যেসব ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারণের সময়ে দুটি বাকপ্রত্যঙ্গের পরস্পরের সংস্পর্শে এসে বায়ুপথে বাধা তৈরি করে, সেগুলোকে স্পষ্ট ব্যঞ্জন বলে। এগুলো স্পর্শ ব্যঞ্জনধ্বনি নামেও পরিচিত।
পথ, তল, টক, চর, কল শব্দের প, ত, ট, চ, ক স্পষ্ট ব্যঞ্জনধ্বনি। উচ্চারণস্থান অনুযায়ী এগুলোকে ওষ্ঠ স্পৃষ্ট, দন্ত স্পষ্ট, মূর্ধা স্পষ্ট, তালু স্পৃষ্ট এবং কণ্ঠ পৃষ্ট – এই পাঁচ ভাগে ভাগ করা যায়, যথা –
- ওষ্ঠ স্পৃষ্ট ব্যঞ্জন: প, ফ, ব, ভ
- দন্ত স্পষ্ট ব্যঞ্জন: ত, থ, দ, ধ
- মূর্ধা সৃষ্ট ব্যঞ্জন: ট, ঠ, ড, ঢ
- তালু পৃষ্ট ব্যঞ্জন: চ, ছ, জ, ঝ
- কণ্ঠ স্পৃষ্ট ব্যঞ্জন: ক, খ, গ, ঘ।
নাসিক্য ব্যঞ্জন কি বা কাকে বলে?
যেসব ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারণের সময়ে ফুসফুস থেকে আসা বাতাস মুখের মধ্যে প্রথমে বাধা পায় এবং নাক ও মুখ । দিয়ে বেরিয়ে যায়, সেসব ধ্বনিকে নাসিক্য ব্যঞ্জন বলে।
মা, নতুন, হাঙর প্রভৃতি শব্দের ম, ন, ও নাসিক্য ব্যঞ্জনধ্বনি।
উষ্ম ব্যঞ্জন কি?
যেসব ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারণের সময়ে দুটি বাকপ্রত্যঙ্গের কাছাকাছি এসে নিঃসৃত বায়ুতে ঘর্ষণ সৃষ্টি করে, সেগুলোকে উষ্ম ব্যঞ্জন বলে।
সালাম, শসা, হুঙ্কার প্রভৃতি শব্দের স, শ, হ উষ্ম ধ্বনির উদাহরণ। উচ্চারণস্থান অনুসারে উষ্ম ব্যঞ্জন ধ্বনিগুলোকে
- দন্তমূলীয় (স),
- তালব্য (শ),
- কণ্ঠনালীয় (হ)
এই তিন ভাগে ভাগ করা যায়। এগুলোর মধ্যে স এবং শ-কে আলাদাভাবে শিস ধ্বনিও বলা হয়ে থাকে। কারণ স, শ উচ্চারণে শ্বাস অনেকক্ষণ ধরে রাখা যায় এবং শিসের মতো আওয়াজ হয়।
পার্শ্বিক ব্যঞ্জন কি?
যে ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারণের সময়ে জিভের ডগা দন্তমূল স্পর্শ করে এবং ফুসফুস থেকে আসা বাতাস জিভের দুই। পাশ দিয়ে বেরিয়ে যায়, তাকে পার্শ্বিক ব্যঞ্জন বলে। লাল শব্দে ল পার্শ্বিক ব্যঞ্জনধ্বনির উদাহরণ।
কম্পিত ব্যঞ্জন কাকে বলে?
যে সব ধ্বনি উচ্চারণের সময় জিভ একাধিকবার খবই দ্রুত দন্তমূলকে আঘাত বা স্পর্শ করার মাধ্যমে বায়ুপথে বাধা সৃষ্টি করে, সেগুলোকে কম্পিত ব্যঞ্জন বলে। কর, ভার, হার প্রভৃতি শব্দের র কম্পিত ব্যঞ্জনধ্বনির উদাহরণ
তাড়িত ব্যঞ্জন ধ্বনি কাকে বলে?
যে ধ্বনি উচ্চারণের সময়ে জিভের সামনের অংশ দন্তমূলের একটু উপরে অর্থাৎ মূর্ধায় টোকা দেওয়ার মতো করে একবার ছুঁয়ে যায়, তাকে তাড়িত ব্যঞ্জন বলে। বাড়ি, মূঢ় প্রভৃতি শব্দের ড়, ঢ় তাড়িত ব্যঞ্জনধ্বনির উদাহরণ।
৩. ব্যঞ্জনধ্বনির কম্পমাত্রা অনুযায়ী বিভাজন
ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারণের সময়ে স্বরযন্ত্রের ধ্বনিদ্বারে বায়ুর কম্পন কমবেশি হওয়ার ভিত্তিতে ব্যঞ্জনধ্বনিকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়:
- ১। ঘোষ
- ২। অঘোশ।
ঘোষ ব্যঞ্জন কি এবং কাকে বলে?
যেসব ধ্বনি উচ্চারণের সময়ে ধ্বনিদ্বারের কম্পন অপেক্ষাকৃত বেশি, সেসব ধ্বনিকে বলা হয় ঘোষ ধ্বনি। যথা: ব, ভ, ম, দ, ধ, ন, র, ল, ড, ঢ, ড়, ঢ়, জ, ঝ, গ, ঘ, ঙ।
অঘোষ ব্যঞ্জন কি এবং কাকে বলে?
যেসব ধ্বনি উচ্চারণের সময়ে ধ্বনিদ্বারের কম্পন অপেক্ষাকৃত কম, সেসব ধ্বনিকে বলা হয় অঘোষ ধ্বনি, যথা: প, ফ, ত, থ, স, ট, ঠ, চ, ছ, শ, ক, খ, হ।
৪. ব্যঞ্জনধ্বনি সৃষ্টিতে বায়ুর প্রবাহ অনুযায়ী বিভাজন
ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারণের সময়ে বায়ুপ্রবাহের বেগ কমবেশি হওয়ার ভিত্তিতে ব্যঞ্জনধ্বনিকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়:
- ১। অল্পপ্রাণ
- ২। মহাপ্রাণ।
অল্পপ্রাণ ব্যঞ্জন ধ্বনি কাকে বলে?
সেসব ধ্বনি উচ্চারণের সময়ে ফুসফুস থেকে নির্গত বায়ুপ্রবাহের মাত্রা অপেক্ষাকৃত কম, সেগুলোকে বলা হয়। অল্পপ্রাণ ধ্বনি। যেমন – প, ব, ত, দ, স, ট, ড, ঢ, চ, জ, শ, ক, গ ইত্যাদি।
মহাপ্রাণ ব্যঞ্জন ধ্বনি কাকে বলে?
যেসব ধ্বনি উচ্চারণের সময়ে ফুসফুস থেকে নির্গত বায়ুপ্রবাহ অপেক্ষাকৃত বেশি, সেগুলোকে বলা হয় মহাপ্রাণ ধ্বনি। যেমন – ফ, ত, থ, ধ, ঠ, ড, ঢ, ছ, ঝ, খ, ঘ, হ ইত্যাদি।
কতটুকু বুঝলেন ধ্বনি সম্পর্কে?
আশা করি আমরা আপনার প্রত্যাশা পূরণ করতে পেরেছি। আমাদের লক্ষ্য শিক্ষ্যাকে আরো সহজীকরণ। আর্টিকেলটি যদি ভাল লাগে, তবে শেয়ার করে অন্যদের পড়ার সুযোগ করে দিন। আমাদের ভিজিটরদের থেকে এটাই আমাদের দাবী।
ধন্যবাদ
6 Comments